মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৯ অপরাহ্ন

ইউরোপে ‘একঘরে’ যুক্তরাজ্য, আতঙ্ক অন্য দেশেও

ইউরোপে ‘একঘরে’ যুক্তরাজ্য, আতঙ্ক অন্য দেশেও

স্বদেশ ডেস্ক:

চলতি বছরের শুরুতে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নোভেল করোনা ভাইরাসের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি যেন আবার ফিরে এলো বছর শেষে। ডিসেম্বর আসতেই ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে এসেছে শীত। আর এ সুযোগেই জিনগত বিবর্তনের মাধ্যমে ভাইরাসটি যেন ধরন পাল্টে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরেছে। বিশেষ করে ইউরোপে অবস্থা এমনই শোচনীয় যে, মহাদেশটির অন্য প্রতিবেশীরা নতুন ধরনের এ করোনা ছড়িয়ে পড়ায় কার্যত একঘরে করে দিয়েছে যুক্তরাজ্যকে।

কারণ এর মধ্যেই ব্রিটিশ স্বাস্থ্য সচিব ম্যাট হ্যানকক স্বীকার করে নিয়েছেন যে- তাদের দেশে দ্রুত সংক্রমণ বাড়ছে এবং পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলাকেই দায়ী করা হয়েছে। এর সংক্রমণ প্রতিরোধে সম্প্রতি ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসে আসন্ন বড়দিনে মানুষের ভিড় ঠেকাতে জারি করা হয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। রাজধানী লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বিরাট অংশজুড়ে জারি করা হয়েছে কঠোর লকডাউন। কারণ ব্রিটিশ সরকার মনে করছে, এ নতুন রূপের করোনা ভাইরাসটির সংক্রমণ সক্ষমতা আগের চেয়েও বেশি। এটি খুব শক্তিশালী রূপ পেয়েছে।

বছরের মাঝামাঝিতে একবার করোনা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া ইতালিতেও মিলেছে ভাইরাসটির নতুন ধরনের এ প্রজাতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম ও অস্ট্রেলিয়াতেও করোনার নতুন এ ধরনের সংক্রমিত রোগী পাওয়া গেছে।

বিবিসি জানায়, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সংক্রামক এ করোনার প্রজাতি ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন দেশ যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। স্থানীয় সময় রবিবার রাত থেকে ফ্রান্স ৪৮ ঘণ্টার জন্য যুক্তরাজ্যের সঙ্গে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে যুক্তরাজ্যের ইংলিশ চ্যানেলের তীরবর্তী ডোভারের ফেরি ও টানেল দিয়ে পার হয়ে সব গাড়ি ও ট্রাকের ফ্রান্সে ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুই প্রান্তেই অসংখ্য গাড়ি ও ট্রাক আটকা পড়েছে। এ ছাড়া গতকাল জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, তুরস্ক এবং কানাডা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিমান চলাচল স্থগিত করেছে।

বন্ধ রয়েছে সড়ক ও জলপথে যোগাযোগও। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করতে দ্রুত বৈঠকে বসবেন। এমন পরিস্থিতিতে মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ইউরোপের বাইরে চীন, ভারত যুক্তরাজ্য থেকে আসা বিমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সৌদি আরব, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশও নিয়েছে একই সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশও অচিরেই সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানা গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ অর্থনীতিতে আবারও মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। বিবিসি বলছে, ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের শেয়ারবাজারের সূচক অনেক পড়ে গেছে। তা ছাড়া ডলারের বিপরীতে পতন ঘটেছে ব্রিটিশ পাউন্ডের। এ ছাড়া বড়দিনের মতো বছরের এমন উৎসবের সময় সরকার মার্কেট ও উন্মুক্ত স্থানে মানুষের জমায়েতে কড়া বিধিনিষেধ দেওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে ইউরোপের বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়াতেও করোনার নতুন এ ধরনটিতে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গেও বিভিন্ন দেশ অচিরেই সব ধরনের যোগাযোগ স্থগিত করতে পারে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া গুচ্ছ বা ক্লাস্টার সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় অস্ট্রেলিয়ায় বিচ্ছিন্ন নগরীতে পরিণত হয়েছে সিডনি। গুরুত্বপূর্ণ এ শহরটিতে দেশটির বাকি সব রাজ্য এবং অঞ্চলের বাসিন্দাদের আসতে নিষেধ করা হয়েছে। দেশটির ভিক্টোরিয়া ও কুইন্সল্যান্ড রাজ্য এবং নর্দান টেরিটোরিতেও গতকাল থেকে জারি হয়েছে সতর্কতা।

গোটা পৃথিবীতেই আবার এমন এক সময় করোনা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে যখন বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭ কোটি ৭২ লাখ ৭১ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১৭ লাখ। সংক্রমণের দিক থেকে এখনো শীর্ষ পাঁচে আছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া ও ফ্রান্স। তবে আশার কথা হলো এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৫ কোটি ৪১ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ।

কতটা ভয়ঙ্কর নতুন ধরনের করোনা

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহমারী শুরুর পর বেশ কয়েকবার জিনগত পরিবর্তন অর্থাৎ মিউটেশনের মাধ্যমে নিজের শক্তি বাড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। যুক্তরাজ্যে পাওয়া নতুন করোনাও মিউটেশনের মাধ্যমে নতুন রূপ নিয়েছে। তবে এটি কতটা প্রাণঘাতী হয়ে উঠেতে পারে, এ নিয়ে গবেষণা চলছে।

ব্রিটিশ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ চলতি বছর সেপ্টেম্বরে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব চিহ্নিত করে। ওই সময় তারা এর নাম দেয় ‘ভিইউআই-২০২০১২/০১’। ডব্লিউএইচওর মহামারী বিশেষজ্ঞ মারিয়া ফন কেরখোভ বিবিসিকে জানান, মহামারীর শুরু থেকে বিশেষজ্ঞরা বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের রূপ পরিবর্তনের দিকে নজর রাখছে। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, আমরা নতুন ধরনের ভাইরাসটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়ার পর সেটির বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সেটি সম্পর্কে সদস্য দেশ এবং সাধারণ মানুষকে জানাব।

ব্রিটিশ গবেষকরা বলছেন, তাদের এখানে ভাইরাসের যে নতুন রূপটি পাওয়া গেছে, তা সাধারণ করোনা ভাইরাসের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সংক্রামক বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এর বিরুদ্ধেও টিকা কার্যকর থাকবে বলে আশা করছেন সবাই। ব্রিটিশ জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা সুসান হপকিন্স জানান, তারা নতুন এই রূপটি সম্পর্কে ডিসেম্বরের ১৮ তারিখেই সরকারকে জানান। একই দিনে ভাইরাসটির নতুন ধরন সম্পর্কে পাওয়া সব তথ্য ডব্লিউএইচওর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তখন থেকেই এটি ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বে দ্রুত ছড়াতে থাকে। ডিসেম্বরের ৯ তারিখে করোনায় আক্রান্ত ৬২ ভাগই নতুন রূপে সংক্রমিত হয়েছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877